স্বাস্থ্য

বাংলা প্যান না হাই কমোড

বাংলা প্যান না হাই কমোড

বাংলা প্যান না হাই কমোড, রোগের জন্য দায়ী কে?

বাংলা প্যান না হাই কমোড এই নিয়ে অনেক বছর ধরে অনেক গবেষণা হয়েছে। সকল গবেষণা ছাড়িয়ে গেছে এই ঘটনাটি। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার হেমোরয়েডে (পাইলস নামে পরিচিত) আক্ৰান্ত হলেন। এর কিছু দিন পর জানা গেল,কমোড  ব্যবহার করার কারণে প্রেসিডেন্ট অসুস্থ হয়েছেন !

কিভাবে এলো কমোড?

হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ উবু হয়ে বসে ,হাঁটু উঁচু করে মলত্যাগ করে এসেছে। উনিশ শতকের মাঝ সময় এ অভ্যাসের বড় পরিবর্তন এলো। ১৮৫১ সালে লন্ডনে এক স্যানিটারি ব্যাবসায়ী তার নতুন পণ্য হাজির করল-হাই কমোড। নাম রাখলো ফ্লাশ টয়লেট।

উনিশ শতকের শেষদিকে লন্ডন থাকে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়লো এটা। এর পর যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি সহ বিভিন্ন দেশে এর ব্যাবহার শুরু হলো।

কমোড  স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা ১৯৬৪ সালে প্রায় একশত বছর পর মার্কিন পরিপাকতন্ত্রবিদ হেনরি বোকাস তার ”বোকাস গেস্ট্রোএন্টেরোলজি ” বইতে লিখেছেন। এই বইতে তিনি বাংলা প্যান ব্যাবহারের  উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তার বইতে তিনি লিখেছেন ” মলত্যাগ করার সময় পেটের সাথে দুই উরু লেগে থাকবে। এটাই মলত্যাগের জন্য সঠিক ভঙ্গি। ”

বাংলাদেশের টয়লেটের অবস্থা:

বিভিন্ন দেশে টয়লেট ব্যবহারের উপায় বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ দেশেই হাই কমোডকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে লো-কমোড বা প্যান ফেলে দিয়ে আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলার জন্য হাই-কমোড বসানো হচ্ছে। যদিও এই আভিজাত্য প্রকাশ করতে বেশকিছু অতিরিক্ত অর্থের অপচয় হয়ে থাকে।

পশ্চিমা দেশগুলোতে ১৮৫১ সালের পর থেকে হাই কমোড এর ব্যবহার শুরু হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের অভিজাত পরিবারগুলো পরবর্তীতে ধীরেধীরে হাই কমোড ব্যবহার শুরু করে, যদিও ব্যবহার শুরুর সুনিদ্দিষ্ট তারিখ জানা যায় নাই।

আজো বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ প্যান ব্যবহার করে, আর যারা প্যান ব্যবহার করছেন তারা জেনে খুশি হবেন যে, প্যান বিলাসী হাই-কমোডের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত।

কমোড ব্যাবহারের ফলে যে রোগ হতে পারে:

চিকিৎসা বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে, কমোড আমাদের কি কি রোগের জন্য দায়ী। নিম্নে সেগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো:

অন্ত্রের প্রদাহ:

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আপনি যখন কমোডে বসেন তখন, পেশিতে চাপ দিতে হয়। অনেক সময় এই অতিরিক্ত পেশির চাপ অন্ত্রে প্রদাহ তৈরি করতে পারে। এবং পরবর্তীতে যা ক্যানসারে রূপান্তর হতে পারে।

ব্যাকটেরিয়ার ছোঁয়া:

যখন আপনি কমোডে বসেন, তখন আপনার পা কমোডের দেয়ালের ঘনিষ্ট সংস্পর্শে আসে। এভাবে সরাসরি ত্বক স্পর্শ করেলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা পাবলিক টয়লেটে এই জাতীয় কমোড ব্যবহার করতে নিষেধ করেন।

হেমোরয়েডস:

এই জাতীয় টয়লেট হেমোরয়েডস বা অর্শ্বরোগ রোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধি করতে পারে। কোলনের শেষ মাথায় এবং মলদ্বারে যে শিরা রয়েছে সেখানে অর্শ্বরোগ বা পাইলস সৃষ্টি হতে পারে। হেমোরয়েডসকে আমার অনেকে পাইলসও বলে থাকি। যেহেতু হাই কমোডে এই ভাবে বসলে বিষয়টি সহজ হয় না, তাই যাদের পায়খানা কিছুটা শক্ত, তাদের অতিরিক্ত চাপ প্রদান করতে হয়। কিন্তু প্যান বা লো কোমোডে বসলে শারীরিকভাবে বেশি চাপ দিতে হয় না। কারণ তখন পেশী আপনিই  চাপ ছেড়ে দেয়।

আমেরিকান কলেজ অব গেস্ট্রোএন্টেরোলজির পরিসংখ্যান মতে ,  আমেরিকার অর্ধেক মানুষ হেমোরয়েডে ভুগতে শুরু করে ৫০ বছর বয়স হবার আগেই।

এই জন্য মার্কিন চিকিৎসকরা রোগীদের প্যান ব্যাবহার করতে উদ্বুদ্ধ  করছে। যে সব রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ মানছেন তারা দ্রুত সেরে  উঠছেন। কারণ প্যানে বসে মলত্যাগ করতে সময় লাগে কমোডের তিন  ভাগের এক ভাগ। এ ছাড়াও কোষ্টকাঠিন্য ও পেলভিক ফ্লোর ডিসঅর্ডার এর মতো রোগ হতে পারে।

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন:

ব্লাডারকে যথেষ্ট পরিমান খালি করতে উবু হয়ে বসা বেশ ভালো। বিশেষত নারীদের প্রস্রাব এই ভাবে উবু হয়ে বসলে বেশ ভালো হয়। কিন্তু উঁচু কমোডে বসলে ব্লাডার সম্পূন রূপে খালি হয় না যা থেকে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনও সৃষ্টি হতে পারে।

হার্ট অ্যাটাক:

ইসরায়েলের ডক্টর বারকোসিকিরোভ এক গবেষণায় দেখেছেন হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের সঙ্গে হাই কমোডের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কারণ অধিকাংশ হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক বাথরুমে হাই-কমোডে বসা অবস্থায় হয়েছে। তাই ধারণা করা হয়, চাপ দিয়ে মলত্যাগের জন্য এই সমস্যা হয়।

ইসলামের দৃষ্টি থেকে কোনটি শরীয়ত সম্মত:

হাদীসে আমরা প্যান বা কমোড ব্যবহার সম্পর্কে তেমন কিছু সুনিদ্দিষ্ট ভাবে পাই নাই। তবে এটা বলা হয়েছে যে, অবশ্যই নির্দিষ্ট কোন জায়গায় মল ত্যাগ করতে হবে। এবং এটিও বলা হয়েছে যে, যেখানেই মল ত্যাগ করা হোকনা কেন, অবশ্যই শরীর বা কাপড় যেন নাপাক না হয়, এবং নাপাক হয়ে যাবার বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

অন্য দিকে দেখা যায়, টয়লেট করার জন্য লোপ্যান ব্যবহার করা শরীয়তসম্মত। কারণ, আমরা জানি ইসলাম দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করাকে সম্পূর্ণ ভাবে নিষেধ করেছে। যা পরবর্তীতে বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে শরীরের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়। আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, “যে লোক তোমাদেরকে বলে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন, তার কথা তোমরা বিশ্বাস কর না। তিনি সব সময় বসেই প্রস্রাব করতেন।”

তবে যদি এমন হয় যে, একজন শারীরিক অসুস্থতার কারণে বসে বাথরুম করতে পারছে না, সেক্ষেত্রে বাথরুমে হাই কমোড ব্যবহার করা যাবে, যা জায়েয ৷ সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজন পড়লে হাই কমোড বাথরুমে বসানো যাবে। তবে কেও যদি শুধু মাত্র ফ্যাশন বৃদ্ধি করার উদ্দেশে বাথরুমে হাই কমোড সেটআপ করে তবে তা মাকরুহে তাহরীমি হবে। আর অন্যদিকে যে বসে পেশাব পায়খানা করতে পারে তবুও হাই কমোড ব্যবহার করে তবে তা মাকরুহে তাহরীমি হবে ৷ কিন্তু যদি এমন হয় আশেপাশে হাই কমোড ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নাই, তাহলে তা ব্যবহার করলে মাকরুহে তাহরীমি হবে না।

পরিশেষে:

পরিশেষে বলা যায়, স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ কমোড ছেড়ে বাংলা প্যানের ব্যাবহার করছে, কমোড ব্যাবহারে অনীহা বাড়ছে। তাই আসুন আমরা সচেতন হই ,কমোড ছেড়ে বাংলা প্যান ব্যাবহার করি।

 

ক্যান্সার প্রতিরোধক খাবার কিভাবে বানাবেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button