ব্যবসায়ের সাফল্যের গোপন পথ-Business Secret
আজকের দিনে আপনি ধনী নন তার কারণ আপনার হাতে কোন টাকা নাই আর তাইতো আপনি ধনী না। তার মানে আপনার কাছে কোথাও বিনিয়োগ করার মত কোন টাকা নাই। সেটা অবশ্য আপনার কারণেই নাই।
ছোটবেলা থেকে আপনি বিভিন্ন ভাবে অনেক টাকাই হাতে পেয়েছেন, কখনো কিছু কিনতে অথবা হাত খরচ হিসাবে এ টাকা গুলো আপনার কাছে এসেছিল, আপনি ভেবেছিলেন যে সারা জীবন এভাবেই টাকা আপনার কাছে আসতেই থাকবে।
কখনো বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন আবার কখনো বা পাড়ার কোন বড় ভাইয়ের কাছ থেকে আপনি টাকা পেয়েছেন, কিন্তু এভাবে তো সারাজীবন তারা আপনাকে টাকা দেবে না। কারো এমন দায় পড়েনি যে সারা জীবন আপনাকে টাকা দিয়ে যাবে। একটা নির্দিষ্ট সময় পরে আপনাকে ব্যবসা করতে হবে।
“ব্যবসা” কারণ ব্যবসা ছাড়া আপনি ধনী হতে পারবেন না। চাকরি কথাটা চাকর থেকে এসেছে। এখন আপনি ঠিক করুন কারো চাকর হবেন নাকি কাউকে চাকরি দিবেন।
যেহেতু ধনী হতে চাচ্ছেন তাহলে ধরে নিলাম আপনি চাকরি দেবেন। এখন ব্যবসায়ের সাফল্যর গোপন পথ আছে যা ক্লাসের কোন বই ঘেটে পাবেন না। এখন আপনি ব্যবসা করবেন, কিন্তু ব্যবসা করতে গেলে সময় ও টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্র জীবনে যদি আপনি, যে ব্যবসা শুরু করতে চান তা নিয়ে ইন্টারনেট অথবা ফিজিক্যালি ঘাটাঘাটি করেন তবে সময় অনেক কম লাগবে, আর টাকা, ছাত্রজীবনে আপনার মোবাইল, বই ,গাড়ি ভাড়া ইত্যাদির খরচ থেকে কিছু বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, তা কি আছে? নাকি সবই আপনার মন খুশির জন্য ব্যয় করে ফেলেছেন।
টাকা জমিয়ে রেখে মন খুশির জন্য খরচ করে ফেললে আপনি ধনী হতে পারবেন না
টাকা জমানোর মাধ্যমে আপনি ধনী হতে না পারলেও, আপনি একটি ব্যবসার বিনিয়োগ তৈরি করে ফেলছেন। তাই আজ আপনি যে বয়সেরই হন না কেন, বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যেই আপনাকে টাকা জমাতে হবে।
সঞ্চয় যত কম বয়স থেকে শুরু করবেন ততো দ্রুত আপনি ধনী হতে পারবেন। কারণ ব্যবসার জন্য পুঁজি তৈরি হয়ে যাবে আর আপনি তখন চাকরি দিতে পারবেন।
আপনি এখন চাকরি বা টিউশনি করছেন আপনার সেই আয় থেকে ১৫ থেকে ২০ ভাগ টাকা সঞ্চয় করুন । যখন হাতে টাকা আসে, মন খুশির কাছে পরাজিত হবেন না। মনকে নিয়ন্ত্রণ করার বিভিন্ন উপায় আছে । এখন আমরা ব্যবসা শুরু করার কিছু কলা কৌশল নিয়ে আলোচনা করি।
ব্যবসা শুরু করার কলা কৌশল
১) ধৈর্য সাফল্যের জন্য প্রথম এবং সর্বাগ্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
২) কোন কাজ কাল থেকে শুরু করব এই ধরনের চিন্তাভাবনা বাদ দিতে হবে। শুরু করে দিতে হবে আজ থেকে। তাহলে দেখবেন কালকে থেকে খানিকটা এগিয়ে গেছেন এবং কালকে একটা লাইনে চলে এসেছেন। কাল থেকে শুরু করতে গেলে ভুলেই যাবেন, যে কোথা থেকে কিভাবে শুরু করতে হবে।
৩) যেসকল কার্যকর পরিকল্পনা আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সেই সকল পরিকল্পনার উপরে স্কিল বাড়াতে থাকেন। অযথা কোনো আড্ডায় সময় নষ্ট করবেন না।
৪) আয় থেকে সঞ্চয় করতে হবে এবং আবারো বিনিয়োগ করতে হবে। মূলত মনে রাখবেন ধনী হওয়ার কোন সহজ রাস্তা নাই। নিজের সাথে বহু বছর যুদ্ধ করে, নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে, জীবনে প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করে টাকার পাহাড় তৈরি করা সম্ভব।
৫) টার্গেট করুন ১০ বছর, এই ১০ বছরের মধ্যে আপনি বিলিয়নার হবেন। এবার আপনি আপনার স্কিল ও সঞ্চয় বাড়াতে থাকুন। এই স্কিল মূলত আপনার আয় কে প্রভাবিত করবে। জ্ঞান অর্জন করুন বিভিন্ন ধরনের বই থেকে, আর এখন তো সবকিছুই ইউটিউব, গুগোল থেকেই পাওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটু কম সময় ব্যয় করুন। মনে রাখবেন সময় আপনার জন্য খুবই মূল্যবান।
৬) যদি ব্যবসা করতে চান তবে স্কিল খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা করতে গেলে নিম্নের এইগুলা আপনার প্রয়োজন হবে:-
⇒কাস্টমারকে কিভাবে প্রভাবিত করা যায়
⇒কাস্টমারের চাহিদা নির্ণয় করন
⇒মার্কেটিং স্কিল অন্যতম
⇒সফটওয়্যার ও কম্পিউটারের উপর বিশেষ জ্ঞান। (জ্ঞান যত গভীর হবে ততই ভালো)
⇒ইংলিশে দক্ষতা
⇒যোগাযোগের জন্য স্কিল
⇒একাউন্টস
⇒ফাইন্যান্স
⇒মন নিয়ন্ত্রণ
⇒মেডিটেশন
এই সকল স্কিল আপনার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজে লাগবে।
৭) কোন পণ্য বা সেবা কেনার আগে একবার ভাবুন পণ্য বা সেবা কিনে টাকা খরচ করা কতটা যুক্তিসংগত। সাত থেকে দশ দিন অপেক্ষা করুন ও ভাবুন সত্যিই প্রয়োজন কিনা যদি প্রয়োজন মনে হয় তবে কিনুন। পণ্যটি ক্রয় করুন যেটা কিনা আপনার সবচেয়ে বেশি সুবিধা বের করে আনতে পারবে। যদি প্রয়োজন না হয় তবে দেখবেন আপনি ভুলে গেছেন।
৮) একটি নোট করুন যে কি কি খরচ না করলেও চলত, এক মাস অথবা ছয় মাস পরে যোগ দিয়ে দেখুন, অংকটা নিজের মনে রাখুন।
৯) এক বছরে আপনার মোট সঞ্চয় কত হলো তা হিসাব করুন। এবার ওই জমানো টাকার তিন ভাগের এক ভাগ বড় কোনো সমস্যার জন্য রাখুন, আর দুই ভাগ সাবধানে কোথাও বিনিয়োগ করুন। যদি আপনার বিনিয়োগের সম্ভাব্য ভালো কোন জায়গা না থাকে তবে ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করুন, এখানে অসংখ্য ব্যবসা লুকিয়ে আছে এখানে ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে সব সময় একেবারে শূন্য হাতে যে কাজ করতে দেবে তাও নয়। এখানে অল্পস্বল্প ইনভেস্টমেন্ট করতে হয় কিন্তু রিটার্ন আসে সারা জীবন, তবে এক্ষেত্রে নিজের কিছুটা স্কিল ডেভেলপ করতে হবে।
১০) ধীরে ধীরে চেষ্টা করুন দুই বা তিনটি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার জন্য, তাতে আপনি বুঝতে পারবেন যে কোনটা থেকে আপনার বেশি ইনকাম হচ্ছে। তবে বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তি খুব ভালো একটি খাত তাই আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ ছাত্রজীবন থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য আপনি ইন্টারনেটকে ব্যবহার করতে পারেন।
১১) অবশ্যই মনে রাখবেন যে ব্যবসার লাভ কখনোই নিজের মন খুশি করতে খরচ করতে যাবেন না।
১২) ইচ্ছা শক্তিকে ধরে রাখুন তা ধরে রাখতে সফল ব্যবসায়ীদের জীবন যুদ্ধের গল্প শুনুন।
১৩) ব্যবসাতে চিন্তা করবেন সব সময় সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকতে, সে ক্ষেত্রে সুযোগ এবং সময় বুঝে একটি সিদ্ধান্ত নিতে আপনার অনেক সহজ হবে।
১৪) এমন ব্যবসা শুরু করা উচিত, তা যেন অন্য কেউ শুরু করতে চাইলে অনেক কাঠ–খড় পোড়ানো লাগে অর্থাৎ আপনার ব্যবসা শুরু করতে যত বেশি বাধা থাকবে অন্যদের তা শুরু করতে ততই কঠিন হবে।
১৫) কাস্টমারের প্রয়োজন কে জানতে ও বুঝতে হবে অর্থাৎ কাস্টমারের প্রয়োজন কি তাই আপনাকে যোগান দিতে হবে। কাস্টমারের প্রয়োজন নাই তা আপনি বানিয়ে ফেললেন অর্থাৎ আপনার যা লাগবে না তার পেছনে কি আপনি টাকা খরচ করবেন, করবেন না। কাস্টমার ও তাই করবে। তাই কাস্টমারের প্রয়োজনকে বুঝুন।
১৬) অনলাইনে ব্যবসায় ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যবসা সবচেয়ে এগিয়ে আছে কারণ মানুষের এখন প্রতিটি মুহূর্ত ইন্টারনেট নির্ভর। এই ব্যবসায় অনেক ক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ ৯০% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
১৭) ব্যবসা শুরু করার আগে ওই ব্যবসা সম্পর্কে যতদূর সম্ভব খোঁজখবর নিতে হবে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নয়, পরামর্শ চাইতে হবে ওই লাইনে প্রতিষ্ঠিত একজনের সাথে।
১৮) সফলতার জন্য পাগল হয়ে যেতে হবে। সফল হতেই হবে, মনে রাখবেন সবাই শিশু হয়ে আসে কিন্তু যার যার ইচ্ছা ও মানসিক শক্তি দ্বারা পৃথিবীতে জায়গা করে নেয়। সঠিক ভাবে জীবন যাপন না করলে ছাত্র জীবন থেকে একটি মানুষ জাতী ও পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে উঠতে শুরু করে। তাই ছাত্রদেরকে সবার প্রথম সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কোন বিষয়ে পড়ালেখা করবে। ছাত্র জীবনে একটা মানুষ ধনী হবে, না কোনরকম জীবন যাপন করবে তা বোঝা যায় তার কার্যকলাপে। যারা সঞ্চয় এবং ইনভেস্ট নিয়ে ছাত্রজীবন থেকেই ভাবনা-চিন্তা করে থাকে তারাই পরবর্তীতে বিলিয়নার হয়।
১৯) অনেকে ধনী হতে যেয় অল্প কিছু টাকা অর্জন করেই ধনীদের মত আচরণ শুরু করে, যদিও তিনি ধনী নন সাময়িকভাবে মনে হচ্ছে তিনি অনেক ধনী হয়ে গেছেন। যদি আপনি ধনীদের মত আচরণ শুরু করেন তবে মনে রাখবেন আপনি ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে রওনা হলেন। তাই কখনোই ধনীদের মত আচরণ করা যাবে না।
২০) জীবনে চলার পথে কিছু বন্ধু পাবেন যারা সবসময় সব বিষয়ে নেগেটিভ আচরণ করে থাকে। কোন ব্যবসা করতে গেলে তারা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সামনে নিয়ে আসে। এই সকল বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয় স্বজন থেকে সাবধান থাকবেন, কারণ এরা আপনার জীবন ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
ভাই, আপনাকে ধনী করে তুলে আমাদের কোনোই লাভ নেই, আমাদের ভবিষ্যতের বংশধররা মানে আপনার সন্তানরা একটি সুন্দর, শক্তিশালী, ধনী সমাজ পাবে। এইভাবে আমাদের দেশ হয়ে উঠবে “First World Countries”
জিডিপি অনুসারে এখন, উইকিপিডিয়ার সূত্র অনুসারে, ২২৮ দি দেশের ভেতর বাংলাদেশের অবস্থান ৩০ তম। প্রথমে আছে চীন, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আমেরিকা। আপনি ভাবতে পেরেছেন, তালিকার শেষের দিকে থাকা দেশটি আজ ৩০ তম।