আন্তর্জাতিক

স্পেনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা

স্পেন ইবেরিয়ান উপদ্বীপ নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত। এর উত্তরে ফ্রান্স এবং অ্যান্ডোরা, পশ্চিমে পর্তুগাল, দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর এবং জিব্রাল্টার এবং পূর্বে বালিয়ারিক সাগর।

স্পেনের মোট জনসংখ্যা ৪৭,৩৫১,৫৬৭, প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯৪ জন মানুষ বসবাস করে। যেখানে মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগ মানুষ শহরে বসবাস করে, আর ২০ ভাগ গ্রামে।

মাদ্রিদ স্পেনের রাজধানী, যেখানে জনসংখ্যা ৩,৩৩৪,৮০০ জন, এ ছাড়াও অন্যান্য প্রধান মেট্রোপলিটন এলাকার জনসংখ্যা  বার্সেলোনাতে ১,৬৬৪,২০০ জন, ভ্যালেন্সিয়াতে ৮০০,৩০০, সেভিলাতে ৬৯১,৪০০, জারাগোজা ৬৮১,৯০০, মালাগাতে ৫,৭৮৫০০, মুরসিয়াতে ৪৫৬.৪০০, পালমাতে ৪২২,৬০০ জন ।

স্পেনে Mediterranean and Nordic জাতীর মানুষের আবাস ভূমি। এই দেশে স্থানীও অধিবাসী আছে ৮৮.৭%, অন্যদিকে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী থেকে আছে ১১.৩% যাদের বেশিরভাগই মরক্কো, রোমানিয়ান, কলম্বিয়ান, ইকুয়েডরিয়ান এবং ভেনজুয়েলান। ( তথ্য: স্প্যানিশ পরিসংখ্যান অফিস)। এদেশের অফিসিয়াল এবং বিজনেস ভাষা স্প্যানিশ। অন্যান্য ভাষার ভেতর আছে ইউস্কেরা, কাতালান, গ্যালিসিয়ান, ভ্যালেন্সিয়ান, ইংলিশ খুব কম ব্যবহৃত হয়। ধর্ম হিসেবে আছে ক্যাথলিক ৭৭%, মুসলিম, প্রোটেস্ট্যান্ট ছাড়াও ৩% কোনো ধর্ম বিস্বাস করে না।

স্পেন ৫,০৫,৯৫৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। যেখানে একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রচলিত।

ক্ষমতা অত্যন্ত বিকেন্দ্রীকৃত যেখানে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলির একটি উচ্চ স্তরের আইনসভা, নির্বাহী এবং আর্থিক স্বায়ত্তশাসন রয়েছে।

অর্থনীতির ধরন বিবেচনা করলে একটি উচ্চ রাজস্ব আদায়কারী দেশ; যে OECD এর সদস্য। অর্থনীতি প্রধানত পর্যটন এবং আর্থিক পরিষেবার উপর ভিত্তি করে চলছে, বিশ্বের শীর্ষ জলপাই তেল উৎপাদনকারী দেশ স্পেন।

প্রতি ১০০ জন বাসিন্দার জন্য কম্পিউটার আছে ৪০ টি, টেলিফোন লাইন আছে প্রতি ১০০ জন বাসিন্দার জন্য ৪১.১ টি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭২ ভাগ। তবে বিদ্যুৎ সুবিধা পায় মোট জনসংখ্যার ১০০ ভাগ। ইউরো স্পেনের জাতীয় মুদ্রা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্পেন একটি সুষম অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে; যাইহোক, COVID-১৯ সংকট দেশটিকে ২০২০ সালে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে চরম মন্দার দিকে নিয়ে যায়, তা সত্ত্বেও ২০২১ সালের প্রথমার্ধে বিভিন্ন অর্থনীতিক কর্মকান্ড দেশটিকে টেনে ধরে রেখেছিলো। সে বছর জিডিপি ৫.৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছিল। স্পেনের মোট দেশীয় পণ্য উৎপাদন ২০২২ সালে ৫.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে কারণ দেশটি বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কাকে বেশ ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছিলো। করোনা মহামারীর প্রভাব কাটাতে গৃহীত ব্যবস্থাগুলির কারণে স্পেনের জনসাধারণের আর্থিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটেছে।

ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দাম বৃদ্ধির মতো সরকার কর্তৃক গৃহীত কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো, যা ২০২১ সালে মূল্যস্ফীতি ২.২ ভাগে নিয়ে গিয়েছিলো।। বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ২০২২ সালে গড়ে ৮.৩ শতাংশ ছিল, যা ২০২৩ সালে ৪.৪ শতাংশে এবং ২০২৪ সাল নাগাদ ২.৩ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

কোভিড-১৯ সংকট মোকাবেলা করার জন্য বিদ্যমান স্বল্প সময়ের কাজের স্কিমগুলিকে শক্তিশালী করা হয়েছিল; যাইহোক, মহামারীটি শ্রমবাজারে বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তবুও, বেকারত্বের হার প্রাক-মহামারী স্তরে কিছুটা ফিরে এসেছে। যেখানে ইউরোপের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি।  ইউরোস্ট্যাট দ্বারা মাসিক প্রকাশিত ডেটা অনুসারে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে স্পেনের বেকারত্বের হার ১২.৮৭% ছিল। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ১৫.৪% ছিল। স্পেন একটি শক্তিশালী বৈষম্যের দেশ হিসাবে আজও রয়ে গেছে, যেখানে স্প্যানিশ পরিসংখ্যান অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, মোট জনসংখ্যার ২৬.৪ ভাগ মানুষ দরিদ্র্য।

স্পেনে ভোক্তাদের আচরণ

স্পেনে ভোক্তাদের আচরণ সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ব্যক্তিগত পছন্দ সহ বিভিন্ন কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখানে স্পেনের ভোক্তাদের আচরণের কিছু সাধারণ প্রবণতা এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

ব্র্যান্ড আনুগত্য: স্প্যানিশ ভোক্তারা সাধারণত সুপরিচিত ব্র্যান্ডের প্রতি অনুগত এবং এ ক্ষেত্রে তাদের পছন্দ খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয় না।

মূল্য সংবেদনশীলতা: ব্র্যান্ডের আনুগত্য থাকা সত্ত্বেও, অনেক স্প্যানিশ ভোক্তা মূল্য-সংবেদনশীল এবং ভাল একটি ডিসকাউন্ট পণ্য খোঁজেন।

সামাজিক এবং পরিবেশগত সচেতনতা: ক্রমবর্ধমানভাবে, স্প্যানিশ ভোক্তারা সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, টেকসই এবং নৈতিকভাবে উৎপাদিত পণ্যগুলির জন্য আরও বেশি অর্থ প্রদান করতে ইচ্ছুক।

অনলাইন শপিং: অন্যান্য অনেক দেশের মতো স্পেনেও অনলাইন শপিং আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভোক্তারা ক্রমবর্ধমানভাবে পণ্য এবং পরিষেবা কেনার জন্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছেন।

কেনাকাটার অভ্যাস: স্প্যানিশরা তাজা পণ্য এবং অন্যান্য পচনশীল পণ্যের জন্য ঘন ঘন কেনাকাটা করার প্রবণতা দেখায়, অনেক বড় সুপারমার্কেটের পরিবর্তে স্থানীয় বাজার এবং স্বাধীন দোকানে কেনাকাটা করতে পছন্দ করে।

পরিবার-ভিত্তিক: স্প্যানিশ সংস্কৃতিতে পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এটি ভোক্তাদের আচরণে প্রতিফলিত হয়। অনেক স্প্যানিয়ার্ড পরিবারের সাথে একসাথে মুদি এবং অন্যান্য গৃহস্থালীর জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে পছন্দ করে।

বাইরে খাওয়া-দাওয়া: স্প্যানিয়ার্ডরা বাইরে খেতে পছন্দ করে, অনেক রেস্তোরাঁ সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিন সাশ্রয়ী মূল্যের সেট মেনু অফার করে। এটি বিশেষত শহরগুলিতে দেখা যায়, যেখানে খাবার খাওয়া একটি সামাজিক কার্যকলাপ যা অনেকেই উপভোগ করে।

সামগ্রিকভাবে, স্প্যানিশ ভোক্তারা ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় গুণমান, ক্রয়ক্ষমতা, সামাজিক ও পরিবেশগত দায়িত্বকে মূল্য দেয়।

Social and economic conditions in Spain

Kollol Khan

My professional background includes research and writing in the field of business.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button