আন্তর্জাতিক

মিশরের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থা

মিশর হল উত্তর আফ্রিকায় অবস্থিত একটি দেশ এবং এটি একটি ট্রান্সকন্টিনেন্টাল দেশ হিসাবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি পশ্চিম এশিয়া ও সিনাই উপদ্বীপে একটি ছোট অংশ রয়েছে। এটির একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে যা ফারাও যুগ, টলেমাইক রাজবংশ এবং ইসলামী যুগ সহ প্রাচীন যুগের। দেশটিতে অনেক ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক নিদর্শন রয়েছে, যেমন গিজার পিরামিড, গ্রেট স্ফিঙ্কস এবং লুক্সর ও কার্নাকের মন্দির। রাজধানী শহর কায়রোতে মিশরীয় জাদুঘরও রয়েছে, যেখানে রাজা তুতানখামুনের ধনসম্পদ সহ প্রাচীন মিশরীয় শিল্পকর্মের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের উপর ভিত্তি করে মিসর অথবা ইজিপ্ট এর মোট জনসংখ্যা ১০ কোটি ৪৭ লক্ষের উপরে। দেশটি ৯,৯৫,৪৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। যার জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১০৩ জন এবং প্রতি বছর ১.৯ ভাগ করে মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মিশরের জনসংখ্যার ৪৯.৫% মহিলা এবং ৫০.৫% পুরুষ, যাদের ৪২.৮ ভাগ শহরে বসবাস করে, এবং ৫৭.২ ভাগ মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে।

বিশ্বব্যাংক থেকে ২০২২ এর জুলাই মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, মার্চের শেষে মিশরে প্রায় ১৫৮ বিলিয়ন বৈদেশিক ঋণ রয়েছে। তবে তারা মার্চ ২০২৩ এর মধ্যে ৩৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে বলে আশা করে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে প্রায় ৩৩.৩ বিলিয়ন ডলার।

মিশরীয় পাউন্ড এর মান আরও অবমূল্যায়ন হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন। বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা টেলিমার পূর্বাভাস দিয়েছে যে, মিশরের  পাউন্ড আগামী বছরে আরো ২২ শতাংশ অবমূল্যায়ন হতে পারে।

গত বছরের জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি বিগত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। যা দেশের খাদ্য, জ্বালানী সহ সব কিছুর দাম দেশব্যাপী ১৯.৬ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে শুধু কায়রো শহরে জীবন যাত্ৰার খরচ প্রায় ২৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়।

পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে মিশর পণ্য আমদানি কমিয়ে রেখেছে, যাতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এর উপর চাপ কম পড়ে। আমদানি কমানোর জন্য ভোগ্যপণ্য সহ কারখানার কাঁচামালের সহজ প্রাপ্যতা কমে গেছে। এতে স্থানীয় সরবরাহ এবং মিশরের রপ্তানি বাণিজ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তাই মিসর এখন দেশীয় পণ্য ব্যবহার এবং উৎপাদনে উৎসাহিত করতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে।

যে সকল শিল্পগুলিকে মিসর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চাপ প্রদান করছে সেগুলো হচ্ছে খাদ্য, কৃষি, কাঠ, প্রকৌশল, ফার্মাসিটিক্যাল, মুদ্রণ, প্যাকেজিং, বিল্ডিং উপকরণ এবং ধাতুবিদ্যা শিল্প। তবে এই শিল্পগুলিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল অধিকাংশই আমদানির উপর নির্ভরশীল।

এ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পর্যটন শিল্প রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার পাশাপাশি মিসরকে এখন যুদ্ধ পরিস্থিকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে বেকারত্বের হার ১৩.২% থেকে কমে ৭.২% হওয়া  সত্ত্বেও, বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চতর যোগ্যতার ধারকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৯০ ভাগ ছাড়িয়েছে গেছে, যা কর্মশক্তির আকার বৃদ্ধিতে প্রতিফলিত হবে। যে কারণে বিনিয়োগ  বৃদ্ধি ও নতুন ব্যবসার বিকাশ ঘটানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ ও বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য মিসরকে আরো কাজ করা দরকার।

সামগ্রিকভাবে, ২০১৮ সালের পরে দারিদ্র্যের হার ২৯.২% এসেছিল, যা ২০২০ সালে তা আবার বেড়ে ৩২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে৷ ২০২২ সালে মিশরে দারিদ্রতার হার হয় ২৭.৯% যা আগের বছর থেকে প্রায় ০.৭% কম। তবে ২০২৩  সালে সে সংখ্যা আরো কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ মিশরের দারিদ্র্যের হারের উপর বার বার প্রভাব রাখছে।

Kollol Khan

My professional background includes research and writing in the field of business.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button