হার্ট অ্যাটাক, যাকে প্রায়ই মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বলা হয়, এটি একটি গুরুতর শারীরিক ঘটনা। যখন হৃদপিণ্ডের পেশীতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় বা কমে যায় । এটি এমন একটি অবস্থা যা হঠাৎ আঘাত করতে পারে এবং এর কারণ, উপসর্গ, প্রতিরোধের ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হৃৎপিণ্ড একটি অসাধারণ অঙ্গ যা আমাদের শরীর জুড়ে অক্সিজেন ও পুষ্টি বহন করে রক্ত পাম্প করে। এটি একটি ইঞ্জিন যা আমাদের জীবিত রাখে, কিন্তু যেকোনো মেশিনের মতো এটি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
হার্ট এট্যাক এর লক্ষণ
হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সময় নিম্নলিখিত যেকোন লক্ষণ দেখতে পারেন :=বুকের কেন্দ্রস্থলে ব্যথা বা অস্বস্তিকর চাপ =ব্যথা বুক ছাড়িয়ে বাম কাঁধ, পিঠ, ঘাড়, চোয়াল, দাঁত বা উভয় বাহুতে বা উপরের পেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে =বমি বমি ভাব বা অবসাদ লাগতে পারে =নিঃশ্বাসে দুর্বলতা লাগতে পারে =অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে =প্রচুর ঘাম হতে পারে =হালকা মাথা ঘোরা বা হঠাৎ মাথা ঘোরা হতে পারে একটি হার্ট অ্যাটাক এ সাধারণত ১৫ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে বুকে ব্যথা হতে পারেহার্ট অ্যাটাক হওয়া সময় সবার লক্ষণ বা তীব্রতা একই রকম নয়। আমাদের কারো হালকা ব্যথা হয় আবার কারোবা তীব্র ব্যথা হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনও লক্ষণই নেই। কিছু হার্ট অ্যাটাক হঠাৎ করে আঘাত হানে আবার কিছু হার্ট অ্যাটাক কয়েক ঘন্টা বা দিন বা সপ্তাহ আগে থেকেই লক্ষণ প্রকাশ করতে থাকে।
প্রাথমিক সতর্কতাটি হলো বারবার বুকের ব্যথা বা চাপ বোধ হতে পারে যা পরিশ্রমে বাড়ে এবং বিশ্রামে কমে
মহিলাদের হৃদরোগের লক্ষণগুলি
গবেষণায় দেখা গেছে ৮০ শতাংশ মহিলা তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগে কমপক্ষে একমাস ধরে উদ্বেগ, ঘুমের ব্যাঘাত এবং অস্বাভাবিক বা অব্যক্ত ক্লান্তি অনুভব করেছেন । মহিলাদের হৃদরোগের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:=মাথা ঘোরা বা হতাশা বা উদ্বেগ =শ্বাসকষ্ট বা অগভীর শ্বাস প্রশ্বাস =অজ্ঞান বা বমি বমি ভাব =চোয়াল, ঘাড় বা পিঠে ব্যথা =বদহজম বা বুকে এবং পেটে গ্যাসের মতো ব্যথা =ঠান্ডা ঘামআরো বিস্তারিত বলতে গেলে বিভিন্ন ধরণের বিশেষ বিশেষ কারণ রয়েছে যেমন:
১) অ্যারিথমিয়াস এর লক্ষণ
অ্যারিথমিয়াস হ’ল অস্বাভাবিক ছন্দ =ধীর নাড়ি বা মাথা ঘোরা =অজ্ঞান বা বুক ব্যাথা
২) অথেরোস্ক্লেরোসিস এর লক্ষণ
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস এর ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট হওয়া ছাড়াও লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে: =শীতলতা বিশেষত অঙ্গগুলির মধ্যে =অব্যক্ত ব্যথা বা পা এবং বাহু দুর্বল
৩) জন্মগত হার্টের সমস্যা
জন্মগত হার্টের সমস্যা গুলি ভ্রূণের বৃদ্ধির সময় হয়ে থাকে কিছু হার্টের সমস্যা কখনই ধরা যায় না। পরবর্তীতে যে লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে : =শ্বাসকষ্ট বা ক্লান্তি =নীল রঙের চামড়া বা পা ফোলা =অনিয়মিত হৃদয়ের ছন্দ
৪) করোনারি আর্টারি ডিজিজ (সিএডি)
সিএডি হ’ল ধমনীতে প্লাক তৈরি হয় যা অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তকে হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুসের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়। সিএডি এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে: =বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি =বুকে চেপে ধরা অনুভূতি বা নিঃশ্বাসের দুর্বলতা =বমি বমি ভাব বা গ্যাসের অনুভূতি
৫) কার্ডিওমিওপ্যাথি
কার্ডিওমিওপ্যাথি এমন একটি রোগ যা হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলি বড় হয় বা কঠোর অথবা দুর্বল হয়ে যায়। এই অবস্থার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে: =অবসাদ,পা ফোলা বিশেষত গোড়ালি =নিঃশ্বাসের দুর্বলতা ও দ্রুত স্পন্দন
৬) হার্ট ইনফেকশন
হার্ট ইনফেকশনের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে: =বুক ব্যাথা বা কাশি বা জ্বর =শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া =চামড়া উপরে ফুসকুড়ি
হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয়
কোনো ভাবেই এক সেকেন্ডও সময় নষ্ট করা যাবে না
রোগীকে মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ রূপে আশস্থ করতে হবে ও রোগীকে রিলাক্স অবস্থায় রাখতে হবে
রোগকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে
কোনো অবস্থায় রোগী নিজে পায়ে হেটে অথবা নিজে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যাবে না
হার্ট এট্যাক নিশ্চিত হলে রক্ত জমাট বাঁধা বন্ধ করতে রোগীকে তাৎক্ষণিক ৩০০ মিলিগ্রাম অ্যাসপিরিন
পথে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে
যদি রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে এবং আপনার যদি বিশ্বাস হয় যে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তবে পরীক্ষা করুন যে ব্যক্তি শ্বাস নিচ্ছেন কিনা এবং তার নাড়ি রয়েছে কিনা। যদি ব্যক্তিটি শ্বাস না নেয় বা যদি নাড়ি না পাওয়া যায় তবে কেবল রক্ত প্রবাহিত রাখতে সিপিআর শুরু করা উচিত। যদি সিপিআর প্রশিক্ষণ না থাকে তবে বুকের মাঝে প্রতি মিনিট এ ১০০ থেকে ১২০ বার চাপ দেন। সহায়তা না আসা পর্যন্ত সঠিক পদ্ধতিতে চালিয়ে যেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে রোগীকে ফ্লোরে অথবা শক্ত জায়গায় বালিশ ছাড়া শোয়াতে হবে এবং মাথা ও চোয়াল এমন ভাবে উপরের দিকে রাখতে হবে যেন
শ্বাস নালী উম্মুক্ত থাকে।ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালের পথে রোগীর জিহ্বার নিচে একটি নাইট্রেট ট্যাবলেট দেওয়া যেতে পারে
কমপক্ষে ২ জন ব্যাক্তির রোগীর সাথে হাসপাতালে যাওয়া ভালো তাতে রোগ সনাক্ত ও চিকিৎসার সময় কিছুটা কমানো যায়।
হার্ট এট্যাক যেন না হয়
নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি আপনাকে কেবলমাত্র হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা করতে নয় বরং ক্যান্সার ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থেকে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারে
ধূমপান ছেড়ে দিন ও অন্য যে কোনো রকম ধূয়া থেকে দূরে থাকুন
নিয়মিত ব্যায়াম করুন, না পারলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন বা ১ ঘণ্টা কায়েক পরিশ্রম করুন।
শারীরিক ওজন কমিয়ে রাখুন
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
স্বাস্থকর খাবার খান যেমন: টমেটো,বাদাম, রসুন, ডার্ক চকোলেট, মটরশুটি, জলপাই তেল, গ্রিন টি, অ্যাভোকাডো, ফ্যাটি ফিশ এবং ফিশ অয়েল