
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন ও ই পাসপোর্ট ফি
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন ও ই পাসপোর্ট ফি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন আপনাদের থাকতে পারে। আমিও যখন প্রথম অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করতে গেলাম, তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো। তবে নিজের ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য এই অভিজ্ঞতা কয়েকবার হবার পর, মনে হলো আপনাদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করি, আপনাদেরকে জানিয়ে দেই ই পাসপোর্ট ফি কত, ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট এর নিয়ম, পাসপোর্ট চেক ও পাসপোর্ট আবেদন কিভাবে করতে হবে।
ই পাসপোর্ট চেক লিস্ট:
পাসপোর্ট মানে বিশাল ঝামেলা, বিশাল ঝক্কি। আপনার মনের ভেতর উঁকি ঝুঁকি মারছে দালাল এই নাম। কিন্তু বিশ্বস্থ দালাল পাওয়া তো এক চ্যালেঞ্জ। আসলে শুধু পাসপোর্ট কেন পৃথিবীতে আপনি জীবনে প্রথমবার যে কাজটি করতে গেছেন, সেটাই কি আপনার কাছে কঠিন মনে হয়েছে না? আমার কিন্তু এমনিই হয়েছে। এখন পাসপোর্ট তো আর মাঝে মাঝেই করা হয় না। ঝামেলা হয় এখানেই, যদি একটু জানা থাকতো তবে কোনো সমস্যায় মনে হতো না। তাহলে আপনাকে জানতে হবে, কোথায়, কিভাবে, কখন, কি করতে হবে। তাই না ?
নিচে আমি একটি পাসপোর্ট চেক লিস্ট তৈরী করেছি, আশা করি সবগুলো বিষয় বুঝতে সুবিধা হবে:
অনলাইনে পাসপোর্ট করার নিয়ম:
অনলাইনে পাসপোর্ট করার নিয়মগুলো বুঝতে কোনো সমস্যা হলে কোনো সমস্যা নাই। আমি পরে আরো বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সংক্ষেপে নতুন পাসপোর্ট হাতে পাবার পর্যায়ক্রমিক উপায়:
• অনলাইন অথবা অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট করার ফর্ম সংগ্রহ করা
• পাসপোর্ট এর ফরম পূরণ করা
• ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা দেয়া
• আবেদন ফরম পাসপোর্ট অফিসে জমা দেয়া ও বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্ট শেষ করা
• পুলিশ ভেরিফিকেশন
• পাসপোর্ট কি অবস্থায় আছে তা মাঝে মাঝে পরীক্ষা করা
• শেষে বহুল প্রতীক্ষিত পাসপোর্ট সংগ্রহ করা
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করতে কি কি লাগে:
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করতে কি কি লাগে, তার একটি তালিকা নিচে আমি আপনার জন্য তৈরী করেছি, আসুন তা জেনে নেই। তবে এমআরপি পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্ট করা অনেক সহজ।
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করতে কি কি লাগে:
আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের কম হলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ
১৮ বছর থেকে বেশি হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
বর্তমানে একটি পাসপোর্ট করতে এই জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র অবসসই লাগবে। এ ছাড়াও কিছু কাগজ লাগতে পারে আবেদনকারীর ধরণ অনুসারে, যেমন: পেশা, বৈবাহিক অবস্থার কাগজ পত্র।
তবে সকল পাসপোর্ট অফিস যে সমান সংখক কাগজপত্র চায় এমন নয়। অতিরিক্ত কাগজের ভেতর থাকতে পারে:\
• ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার, উকিল ও অন্যান্য পেশার লোকদের ক্ষেত্রে পেশাগত সনদ বা ছাত্র হলে স্টুডেন্ট আইডি, ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স এমন।
• সরকারী চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে NOC বা Government Order
• যদি স্বামী বা স্ত্রীর নাম নতুন যুক্ত হয় তবে কাবিননামা
• পুরাতন পাসপোর্ট থাকলে তার কপি
• আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয় তবে তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র
• আবেদনকারী যদি ১৫ বছরের নিচে হয় তবে পিতা-মাতার পাসপোর্ট সাইজ ছবি দিতে হবে। যদি পিতামাতা না থাকে তবে বৈধ অভিভাবক এর ছবি দিতে হবে।
• অন্য দিকে আবেদনকারীর বয়স যদি ৬ বছরের নিচে হয় তবে পাসপোর্ট সাইজ ছবি সাথে 3R সাইজের (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড) ষ্টুডিও থেকে তোলা ছবি দিতে হবে।
ঢাকা থেকে পাসপোর্ট করতে গেলে ঠিকানা ভেরিভিকেশন এর জন্য ইউটিলিটি বিল দেখানো লাগতে পারে। তবে এর জন্য তেমন কিছু লাগে না, শুধু NID কপি হলেই হয়। একটি বিষয় মনে রাখবেন, এই সকল কাগজ পত্র সংগ্রহ করে তবেই পাসপোর্টের কাজ হাতে নেওয়া ভালো। কারণ যে কোনো সময় অফিসার বা পুলিশ ভেরিফিকেশন এর সময় ইউটিলিটি বিল, স্বামী স্ত্রীর NID, নাগরিক সনদ, পেশার প্রমাণ, স্থায়ী ঠিকানা প্রমান পত্র প্রয়োজন হতে পারে।
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম :
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম গুলো খুব সতর্কতার সাথে পালন করা উচিত, আপনি যদি কোথাও ভুল করে ফেলেন, তবে তা সংশোধন করা বেশ ঝামেলা। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
প্রথমে পাসেপোর্ট করার জন্য সরকারি ওয়েবসাইটে যেয়ে যা যা পর্যায়ক্রমে লিখতে হবে তার তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
১. আপনার বর্তমান ঠিকানা যে জেলায় তার নাম
২. থানার নাম
৩. ইমেইল ও ফোন নাম্বার
একটি বিষয়, যখন আপনি নাম লিখবেন তা অবশ্যই ওই পাসপোর্ট আবেদনকারীর সার্টিফিকেট, NID বা জন্ম নিবন্ধন অনুসারে হবে। Given name ও Surname দুই জায়গাতে নামকে ভাগ করে লিখুন। তবে ডট (.), কমা (,), হাইফেন (-) ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না।
আপনার যদি শহরের ঠিকানা হয় তবে চেষ্টা করবেন ঠিকানার সকল ঘর পূরণ করে দিতে। কিন্তু যদি গ্রাম হয় তবে Road/Block/Sector এর ঘরগুলো পূরণ না করলেও চলে।
স্থায়ী ঠিকানার ক্ষত্রে আপনার নিজেদের কেনা বাড়ির ঠিকানা অথবা আপনার বাবার বাড়ির ঠিকানা দিতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনে অনেক সময় জমি বা ফ্ল্যাটের দলিল দেখানো লাগতে পারে।
এইতো গেলো আপনার নিজের সকল তথ্য। এখন আসুন পিতা-মাতা, স্পাউস এইসব বিষয়ে:
পিতা-মাতা: এই ঘরটিতে আপনার বাবা মায়ের নাম দিবেন। তাদের আর কোনো তথ্য না দিলেও সমস্যা নেই।
স্পাউস: পাসপোর্ট আবেদনকারী যদি বিবাহিত হয়, তবে কাবিন নামার তথ্য গুলো লাগবে। অন্যদিকে স্বামী /স্ত্র্রীর নাম এবং তার আনুসাঙ্গিক কিছু তথ্য দিয়ে দিবেন।
এমার্জেন্সি কন্ট্রাক্ট: এইখানে পছন্দের কারো ঠিকানা দিয়ে দিবেন, যদি আপনি বিদেশে কোনো বিপদে পড়েন তবে সেই ব্যাক্তির সাথে যোগাযোগ করবে কতৃপক্ষ।
একটি ঘর পাবেন, যেখানে বলা আছে পাসপোর্ট অপশনস, এখানে আবেদনের ধরন ও পৃষ্ঠা সংখ্যা নিধারণ করবেন, এই উপর নির্ভর করে পাসপোর্টের খরচ নিধারণ হবে। এরপর আছে ডেলিভারি অপসন এবং এপয়েন্টমেন্ট, ঢাকার ভেতরে এপয়েন্টমেন্ট লাগে কিন্তু ঢাকার বাহিরে সাধারণত ওটা লাগে না। তাহলে ই পাসপোর্ট আবেদন করতে কি কি লাগে তার সকল তথ্য আপনি জেনে গেলেন।
পাসপোর্ট পেতে কত দিন লাগে:
পাসপোর্ট পেতে কত দিন লাগে এই প্রশ্নটির উত্তর এখনই সঠিক ভাবে দেওয়া যাচ্ছে না, কারণ তা বিভিন্ন বিষয়য়ের উপর নির্ভর করে।
আপনার প্রয়োজন অনুসারে আপনি জরুরি বা Express /Super Express ঘরে আবেদন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে। তবে সাধারণ দিলে ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগে।
সব শেষের পৃষ্টাতে আপনাকে যখন নিয়ে যাওয়া হবে, সেখানে আপনি এতক্ষন যেসব তথ্য দিলেন তা দেখাবে। আপনি সকল তথ্য খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করবেন। সব ঠিক থাকলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করবেন। মনে রাখবেন একবার সাবমিট করে দিলে আর কিন্তু কোনো পরিবর্তন করতে পারবে না।
এইপর সেখানে ডাউনলোড করা যায় এমন একটি পিডিএফ ফাইল দিবে তা ডাউনলোড করে প্রিন্টআউট করে নিন।
ই পাসপোর্ট ফি কত ২০২৩ সালে:
ই পাসপোর্ট ফি কত, ২০২৩ সালে তা মেয়াদ ও দ্রুতার উপর নির্ভর করে নিধারিত হবে। তবে খুব তাড়াতাড়ি ৪৮ পাতার জন্য আবেদন করার সুযোগ থাকছে না। এখন ৬৪ পৃষ্ঠার মেয়াদ ৫ বছর, নিয়মিত করছি ৬৩২৫ টাকা, জরুরি হলে ৮৬২৫ টাকা, অতিব জরুরি হলে ১২০৭৫ টাকা।
এখন ৬৪ পৃষ্ঠার মেয়াদ ১০ বছর, নিয়মিত করছি ৮০৫০ টাকা, জরুরি হলে ১০৩৫০ টাকা, অতিব জরুরি হলে ১৩৮০০ টাকা।
৬৫ বছরের বেশি অথবা ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যাক্তিরা ৫ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট করতে পারবেন। তবে আরো কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে, যে একদম নতুন পাসপোর্ট আবেদনকারীরা জরুরি আবেদন করতে পারবে না। জরুরি আবেদন শুধু মাত্র MRP পাসপোর্ট ধারীরা করতে পারবেন। তবে এখানে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারবেন না।
ই পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম:
ই পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম গুলো খুবই সহজ, একটি মাধ্যমে আপনাকে একদিন ছুটা-ছুটি করতে হবে। তবে মনে রাখবেন ফরম পুরন করার পর কিন্তু পাসপোর্ট ফি জমা দিতে পারেন। দেখে নিন ই পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম:
ই পাসপোর্ট ফি ব্যাংকে জমা দেয়া:
চলানের মাধ্যমে আপনার আশেপাশে প্রায় সব ব্যাংকেই আপনি ই পাসপোর্ট ফির টাকা জমা দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে একটা অসুবিধা হলো সব ব্যাংক টাকা জমা নাও নিতে পারে। সেক্ষেত্রে আগে জানতে হবে কোন ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা নেয়। এর পর প্রয়োজনীয় সকল কাগজ পত্র নিয়ে ফি জমা দিতে হবে।
এছাড়া এ-চালানের মাধ্যমে ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ই পাসপোর্ট ফি জমা দিতে পারবেন।
বাংলাদেশ পাসপোর্ট চেক লিস্ট:
বাংলাদেশ পাসপোর্ট চেক লিস্ট আপনার সুবিধার কথা চিন্তা করে নিচে অল্পকথায় দিলাম, আশা করি আপনার উপকার হবে।
পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দেয়ার আগে কাগজগুলো চেক করে নিতে পারেন। সেগুলো নিচে দেয়া হলো :
• এপ্লিকেশন ফরম (৩ পৃষ্ঠা)
• জন্ম নিবন্ধরের ফটোকপি (আসলটাও দেখাতে হবে)
• পেশাগত প্রমাণ (স্টুডেন্ট আইডি, জব আইডী, ট্রেড লাইসেন্স, ইত্যাদি)
• কাবিননামা (যদি লাগে)
• নাগরিক সনদপত্র
• ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি
• পুর্ববর্তী পাসপোর্ট এর ফটোকপি (যদি থাকে-আসলটাও দেখাতে হবে ]
পাসপোর্ট করার সময় হয়রানির স্বিকার হলে পরিচালকের সাথে কথা বলুন।
পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন কিভাবে করতে হয়:
আপনি আবেদন পত্রটি জমা দেয়ার ৩-৭ দিনের মধ্যেই সাধারণত পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আপনাকে ডাকা হবে। পুলিশ আপনাকে তাদের অফিসে যেতে বলতে পারে অথবা আপনার বাড়িতে আসতে পারে। পুলিশ ভেরিফিকেশনে কি লাগবে তা আসলে তদন্তকারী কর্মকর্তার উপরই নির্ভর করে। এই সময় যেগুলো লাগতে পারে তা হলো
• আপনার NID/BRC
• নাগরিক সনদ
• ইউটিলিটি বিল
• পেশাগত প্রমাণ
• বাবা/মায়ের NID
জমি বা ফ্ল্যাটের দলিল ঢাকায় হলে লাগে। জেলা পর্যায়ে দলিল সাধারণত লাগে না।
আপনার তদন্তকারী কর্মকর্তাই সাধারণত জানাবে কি লাগবে, সেগুলো নিয়ে গেলেই হবে।
সাধারণত আবেদন পত্র জমা দেয়ার ৩-৭ দি নের মধ্যেই আপনাকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ডাকা হবে। পুলিশ আপনার বাড়িতে আসতে পারে অথবা আপনাকে তাদের অফিসেও যেতে বলতে পারে অথবা অন্য কোথাও দেখা করতে বলতে পারে। পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে কি কি লাগে তা আপনার অবস্থান, বয়স, পেশা বা তদন্তকারী কর্মকর্তার উপর নির্ভর করে আসলে। আপনাকে নিচের ডকুমেন্টগুলোর মাঝে কিছু দিতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আবেদন ফর্মে যদি স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা ভিন্ন হয় তাহলে, দুই যায়গাতেই ভেরিফিকেশন হবে।
ভেরিফিকেশনে অনেক সময় ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।পরিস্থিতি যদি এমন হয় তবে টাকা দিতে রাজি হবেন না। যদি সকল ডকুমেন্ট ভ্যালিড থাকে তাহলে অফিসার নেগিটিভ রিপোর্ট দিতে পারবে না। হয়তোবা আপনার রিপোর্ট টি জমা দিতে একটু দেরী করবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের ২-৩ দিনের মধ্যেই আপনার পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেঞ্জ হবার কথা। যদি না হয় তবে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশ হয়ে গেলে আপনার কাজ শেষ।
প্রবাসীদের জন্য খুব সহজেই লোন পেতে পারেন তার বিস্তারিত জানতে আমাদের লিঙ্কে দেখতে পারেন।